সেলিম তালুকদার, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রাশিদুল ইসলাম (৩০) নামের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে জোর করে তুলে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ট্যাম্পে এবং ১২ লক্ষ টাকার কাবিন নামায় স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। পরে শাহজাদপুর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে স্থানীয় প্রধানদের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী রাশিদুল ইসলাম উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের চর পোরজনা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং পোরজনা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ৯ বছর পূর্বে রাশিদুল ইসলামের সাথে পাশ্ববর্তী বাচড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে মোছাঃ শাপলা খাতুন (২৮) এর রেজিস্ট্রি কাবিনে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ সম্পন্ন হয়। তাদের ঘরে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
বিবাহের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে নানা সমস্যা চলছিল। বিষয়টি মিমাংসার লক্ষ্যে বারবার শালিসও করা হয়েছে।
এরই জের ধরে সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দলীয় প্রোগ্রাম থেকে বাড়ি ফেরার পথে পোরজনা বাজারে সুমন ডাক্তারের দোকানের সামনে থেকে রাশিদুলের শ্বশুর সাইফুল ইসলামের নির্দেশে তার শ্যালক শাকিব ও অন্যান্যরা তাকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার মামা শ্বশুর জানে আলমের বাচড়ার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মারপিট করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে জোর করে ১০০ টাকার ৬টি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ও একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান।
এসময় স্থানীয় কাজী আমিনুল ইসলাম রিপনের বিবাহ রেজিস্ট্রার বইয়ে ১২ লক্ষ টাকার কাবিননামায়ও তার স্বাক্ষর নেয়া হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে রশিদুলের পরিবারের পক্ষ থেকে শাহজাদপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশের হস্তক্ষেপে স্থানীয় প্রধানদের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর তার শ্যালক শাকিব, শ্বশুর সাইফুল ইসলাম, মামা শ্বশুর জানে আলম, স্ত্রী শাপলা খাতুন ও কাজী আমিনুল ইসলাম রিপন সহ ৯ জনকে আসামী করে শাহজাদপুর উপজেলা আমলী আদালতে তার পিতা আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে একটি মামলা (কোর্ট পিটিশন ২৫৮/২৪) দায়ের করেন।
রাশিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কান্নাজড়িত কন্ঠে তার উপর নির্যাতন চালিয়ে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করানোর বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) সরেজমিনে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার ছোট মেয়ে সাথী ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। এসময় সাথী জানান, তার বাবা, ভাই এবং বোন কেউই বাড়িতে নেই। তারা কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি একেকবার একেক রকম তথ্য দিতে থাকেন।
অন্য অভিযুক্ত পালোয়ানকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ঘটনার সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ রাশিদুল তার স্ত্রী শাপলাকে বাপের বাড়ি ফেলে রেখেছে। তিনি আরো দাবি করেন, উভয়ের সম্মতিতেই নতুন করে কাবিনের টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কাজী আমিনুল ইসলাম রিপন কাবিনের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্বামী – স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে তিনি নতুন করে কাবিন রেজিস্ট্রি করেছেন।
রাশিদুলকে তার মামা শ্বশুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরকারী অন্যতম প্রধান রাবেক প্রামানিক জানান, আমরা তাকে সুস্থ্য অবস্থায় তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছিলাম। তবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আসলাম আলী জানান, “স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য কহলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট একটি ঘটনা। ঐ দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি জানতে পেরে রাশিদুলের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে আমরা তাকে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করি।”
Leave a Reply