মো: আরিফুল ইসলাম সুমন,সিরাজগঞ্জ: ঈদসহ যেকোনো উৎসবের ছুটিতে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানজট ভোগান্তি ছিল নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু এবারের
ঈদযাত্রায় সকল হিসেব-নিকেশ পাল্টে গেছে। প্রচ- তাপদাহ রোধে পুড়ে ভোগান্তি মুক্ত এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন। বদলে গেছে মহাসড়কের চিরচেনা সেই দৃশ্যপট।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২২ জেলার প্রায় ১৮-২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে এ সংখ্যা
দুই থেকে তিনগুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় এ সড়কে যাত্রীদের বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। কখনো ধীরগতি, কখনো তীব্র যানজট সৃষ্টি
হয়ে সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে জেলার সব মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এবারের ঈদযাত্রায় সেই দৃশ্য পাল্টে দিয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ।
জানা যায়, সাসেক সংযোগ সড়ক-২ প্রকল্পের এলেঙ্গা-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজের আওতায় সিরাজগঞ্জ অংশে রয়েছে ৪৩ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রকল্পটি হেগো-মীর আখতার হোসেন জেভি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর-ধোপাকান্দি পর্যন্ত ১৯.৮ কিলোমিটার প্যাকেজটিতে নলকা সেতু ছাড়াও ৭টি সেতু রয়েছে। ৬৪৯ কোটি টাকার এই প্যাকেজে দেশ-বিদেশের ১১ জন কনসালটেন্ট নিয়োজিত আছেন। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও তা আরও এক বছর
বাড়িয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত রবিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৩টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার
হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১১ কোটি ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কড্ডার মোড দিয়ে চলাচলকারী স্টারলিড পরিবহনের বাস-চালক হাফিজুর রহমান বাবু বলেন, এবারের ঈদের আগমুহূর্তেও যানজট ছাড়াই ঢাকায় যাতায়াত করা যাচ্ছে। বিগত ৯ থেকে ১০ বছরে ঈদের আগ মুহূর্তে এ সড়ক এমন যানজট মুক্ত দেখিনি। মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে এ মহাসড়ক দিয়ে গন্তব্যে যেতে পেরেছে।
একই ধরনের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন ঢাকা থেকে রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা,পাবনা ও নাটোরগামী মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পরিবহন চালকেরা।
ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী এস.আই এন্টার প্রাইজের বাস-চালক আজাদ রহমান বলেন,এ বছর ঈদযাত্রায় তেমন কোনো যানজট ও ধীরগতি ছাড়াই সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক পার হতে পেরেছি। এবারের সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের ঈদযাত্রা সত্যিই যেকোনো বছরের চেয়ে স্বস্তিদায়ক হয়েছে।
মোটরসাইকেলের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। পুলিশের কয়েকটি বিশেষ উদ্যোগের কারণে এবার আরামদায়ক ঈদযাত্রা হয়েছে। তবে রোজার মধ্যে প্রচ- রোদে শিশু ও বয়স্কদের কষ্ট বেশি হয়েছে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কে সার্বিক দায়িত্বে থাকা জেলার পুলিশ সদস্যরা রোদে পুড়ে নিরলস ডিউটি করেছেন। র্যাব ও পুলিশ
প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে টহলে ছিল।
হাটিকুমরুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম বলেন, মহাসড়কের পাশেই আমার ইউনিয়ন পরিষদ। আমি দেখেছি এবারের ঈদযাত্রায় নারীর টানে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হয়নি বললেই চলে। এ কারণে অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনের প্রসংশা করতে হবে।
সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. খালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, ঈদ উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কে ২৪ ঘণ্টাইর ১০টি বাইক মোবাইল টিম, ১৪টি পয়েন্টে ১৪টি পিকেট টিম, ২টা পিকআপ টিম ও ১টা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পুলিশ সদস্য কাজ করেছেন। সচেতেনতায় মাইকিং ও জিডিটাল সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার থেকে সবকিছু মনিটরিং করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছিলাম।
সিরাজগঞ্জ সুপার সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, অন্য যেকোনো বারের তুলনায় এবার ঈদ যাত্রায় যানজটমুক্ত ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ,জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ প্রায় ৮শ পুলিশ সদস্যরা রোদে
পুড়ে সার্বক্ষনিক সিরাজগঞ্জের ৪৫ কি.মি. মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ভোগান্তিমুক্ত ঈদযাত্রা হয়েছে।
Leave a Reply