এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জঃ
এবার ঈদে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরবে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলার মানুষ। বঙ্গবন্ধু সেতু গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এবং হাটিকুমরুল থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সংস্কার করা হয়েছে। যেখানে খানাখন্দ ছিল তাও সংস্কার করা হয়েছে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে এজন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পাঁচলিয়া ওভারব্রিজ। এ সেতুর কাজও প্রায় শেষের দিকে। ৪ এপ্রিল থেকে এ সড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। পুরো মহাসড়কের চিত্র এখন পাল্টে গেছে। যে কারণে এবারের ঈদে উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষ স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরোদমে চলছে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর সড়কের চার লেনের কাজ।
উত্তরের পথে ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ সামাল দিতে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার চার লেন চালু করা হয়েছে। তবে মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যাতায়াতে স্বস্তি ফেরাতে খুলে দেওয়া হয়েছে পাঁচলিয়া ওভারব্রিজ। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।
প্রতিবছর ঈদুল ফিরত ও ঈদুল আজহার সময় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত এ মহাসড়ক পাড়ি দিতে যাত্রী ও চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে এবছর মহাসড়কের নলকা ব্রিজ, ফ্লাইওভার ও চার লেনের কাজ অনেকাংশে শেষ হওয়ায় অনেকটাই স্বস্তি পেতে পারেন উত্তরবঙ্গে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ। স্বাভাবিক দিনে গড়ে ২০-২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদযাত্রায় ৩০-৩৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। তবে এবার উত্তরের ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াতে যেন বিঘ্ন না ঘটে, এজন্য হাটিকুমরুল মোড়ে একমাস আগে কংক্রিটের রাস্তা মেরামত করে দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে বগুড়ার মোকামতলা হয়ে রংপুর পর্যন্ত পুরোটাই চার লেনের ফ্যাসিলিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-৩) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এজন্য এবার নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে যাত্রীরা।
সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-৩) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সাসেক সড়ক প্রকল্প এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চলছে। প্রতিবার যেটা হয় উত্তরবঙ্গের ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো আছে সড়ক। গত বছরও কোন সমস্যা হয়নি। এ বছরও হবে না।
তিনি আরও বলেন,বঙ্গবন্ধু সেতুপশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে বগুড়ার মোকামতলা হয়ে রংপুর পর্যন্ত পুরোটাই চার লেনের ফ্যাসিলিটি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কের কিছু কিছু জায়গায় ছয় লেনও নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচলিয়া, সয়দাবাদ, কড্ডার মোড় ওভারব্রিজ চালু করে দেওয়া হয়েছে। আর হাটিকুমরুল থেকে বগুড়ার মির্জাপুর পর্যন্ত কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সড়কে যেখানে যেখানে খানাখন্দ ছিল তাও সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে।
ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, এজন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পাঁচলিয়া ওভারব্রিজ। এতে পুরো সড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। এদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে মনিটরিংয়ে ডোন ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোঃ শাহাবুদ্দিন ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনিসুর রহমান।
তারা মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রেস বিফিংয়ে এতথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন , এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়ক ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। মহাসড়কে কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তা ড্রোন দিয়ে শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড্রোনের মাধ্যমে যানজট মনিটরিং করা হবে। কোথাও যানজটের আশঙ্কা থাকলে অথবা যানজট তৈরি হলে সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার পৃথকভাবে সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন তার। পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোঃ শাহাবুদ্দিন ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনিসুর রহমান আরো বলেন, ‘ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এবং হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আমরা চিহ্নিত করেছি। এসব জায়গায় ৭ শতাধিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সিনিয়র পুলিশ অফিসাররা তদারকিতে থাকবে। মোবাইল টিম থাকবে। যাত্রাপথে যদি কোনো গাড়ি নষ্ট হয় বা বিকল হয়ে পড়ে, সেগুলো দ্রুত উদ্ধারে ছয়টি রেকার প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে । যাতে দ্রুত গাড়িগুলো অপসারণ করে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করতে পারে।
এ ছাড়া ড্রোনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে যানজট মনিটরিং করা হবে। কোথাও যানজটের আশঙ্কা থকলে অথবা যানজট তৈরি হলে সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ‘ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে থ্রিহুইলার, নসিমন-করিমন, ভটভটি চলতে দেওয়া হবে না। কেউ চলার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি জায়গায় আমরা সিল করে দেব, কেউ মহাসড়কে উঠতে পারবে না। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়িও মহাসড়কে উঠতে দেওয়া হবে না।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ। এখানে ফিটনেসবিহীন গাড়িও চলতে দেওয়া হবে না। ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ বিষয়েও সতর্ক আছি। ইতিমধ্যে ৫-৭ বছরের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। রাজশাহী বিভাগে একযোগে অভিযান চলছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টি এবং যত রকম পার্টি আছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। এবার ঈদে কোনো পার্টি সুবিধা করতে পারবে না বলে তারা উল্লেখ করেন।
এ সময় সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দিন, হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওয়াদুদসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply