নজরুল ইসলাম:
ইরাক, দুবাই, সৌদিন আরবসহ মধ্যেপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে একাধিক যুবককে প্রথমে নেওয়া হয় দুবাই। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন ভিজিট ভিসা পরবর্তীতে জানতে পারে কারোরই হয়নি ভিসা। পরে ওই দেশগুলোর কারাগারে জেল হাজত খেটে ফিরে আসেন বাড়িতে। এমনই ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নে। জেলায় ১০-১২টি গ্রামের যুবকের কাছ থেকে এমন অভিনব প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রবাসী ফিরোজ, কামরুল ও তার পরিবার।
এদিকে দেশে থাকা প্রবাসী পরিবারের কাছে টাকা ফেরত চাওয়ায় ভুক্তভোগীদের নানান ভয়ভীতি ও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে গ্রেফতার করানোর পাঁযতারা করছে একটি কুচুক্রী মহল।
যদিও পুলিশ বলছে, প্রতারকের মামলার তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসে নাই। যদি আসে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদেরকে আমরা ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারন তারা অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে তাদের পরিবারকে হাসি ফুটানোর জন্য যায়। এ বিষয়ে তৎপর প্রশাসন।
জানা যায়, সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুড়িয়া দক্ষিন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাশেম আলীর ছেলে শরিফ, মান্নানের ছেলে শামীম, জলিলের ছেলে সবুজ, বারিকের ছেলে আলামিন আকছেদের ছেলে আ: রহমানকে বিদেশ পাঠানোর জন্য দালাল হান্নান পাঁচ জনের কাছ থেকে প্রথমে দেড় লাখ করে সাড়ে সাত লাখ টাকা নেন। পরবর্তীতে একইভাবে দফায় দফায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও কামরুলের পরিবারের কাছে নিয়ে দশ লক্ষ টাকা দেন যা প্রবাসী ফিরোজ ও কামরুলের তদারকিতে এ অর্থ গুলো নিয়ে থাকেন হান্নান। জমি বিক্রি, এনজিওদের কাছে থেকে লোন, গবাদিপশু বিক্রি, জমি বন্ধকসহ সুদে টাকা এনে সমাজের মুরুব্বীদের সাথে নিয়ে ইরাক যাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে প্রবাসী ফিরোজের বাবা হান্নানের হাতে এসব টাকা তুলে দেন।
ভুক্তভোগী প্রবাস শামীমসহ অন্যান্যরা জানান, পার্সপোর্ট হওয়ার পর নানান প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ভিজিট ভিসা দুবাই পরে প্লেন যোগে ইরাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পয়ঁত্রিশ লাখ টাকার মধ্যে সতের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার গ্রহন করে আব্দুল হান্নান। ভিসা প্রক্রিয়া হবে সময় লাগবে এমন তথ্য দিয়ে দীর্ঘ তিন মাস আমাদের দুবাই আটকিয়ে রাখে। পরে পরিবার ও আমাদের মানসিক ও শারিরীক অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় দুবাইয়ের ট্রলার যোগে অবৈধভাবে পাঠানোর চেষ্টাকালে প্রশাসনের সাড়াশি তল্লাশীতে আটক হয়ে যাই। পরে অবৈধ প্রবাসী হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করেন। দীর্ঘ তের দিন হাজতী থাকার পর দুবাই ইমিগ্রেশন বিমান যোগে দেশে পাঠিয়ে দেন। আসার পর কয়েক দফা টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করছে প্রতারক হান্নান, তার ছেলে প্রবাসী ফিরোজ ও কামরুলের পরিবার। এ নিয়ে হান্নানের পরিবারের কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে মাসের পর মাস মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছে। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আড়াই মাস আগে পাশবর্তী ঝাঐল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফি, সাইদুল ইসলাম ও শিয়ালকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, ইউপি সদস্য ছানোয়ার হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, সাবেক সদস্য হাফিজুলসহ এলাকার ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে টাকা নেওয়ার বিষয় স্বীকার করে। পরবর্তীতে জামুয়া গ্রামের প্রবাসী কামরুলকে দায়ী করলে সুষ্ঠ মিমাংসা করনে পাঁচ দিন সময় বেঁধে দেন। যা দুই মাস পার হলে আজও এর সুরাহা মেলেনি। এনিয়ে আজ (১৮জুন) মঙ্গলবার সকালে টাকা চাইতে গেলে নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ীতে মারধর করার জন্য আসে। এসময় তাদের উপর্যোপুরী অবস্থা ও পুলিশ নিয়ে আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হান্নানের পরিবারকে নিয়ে যায়।
প্রবাসী ফিরোজের বাবা হান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেনি।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার জিনাত জাহান বলেন, কয়েকটি গ্রাম থেকে এভাবে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা বড়মাপের প্রতারক ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে। অসহায় এসব গরিব মানুষের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে যদি তারা আমাদের নিকট আবেদন করেন।
এ বিষয়ে শিয়ালকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে। দরবারে অর্থ লেনদেনের বিষয় স্বীকার করেছে। তবে প্রবাসী কামরুল টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয় আমাদের কাছে আশ্বস্ত করেছে।
Leave a Reply