এম.দুলাল উদ্দিন আহমেদ: আজ ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐতিহাসিক সলঙ্গায় ৩৩.৩৩ একর সরকারি খাস জায়গা থাকার পরও সেখানে নেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তৎকালিন সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে যে জায়গাটি নির্ধারণ করে বেদী স্থাপন করে ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপণ করা হতো সে জায়গাটিও অদৃশ্য হয়েগেছে ! ফলে ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপণের জন্য সলঙ্গা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার-ই হচ্ছে থানা প্রশাসন,রাজনীতিক দল,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজী সংগঠনসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের একমাত্র ভরসা। তবে সলঙ্গার মতো গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকাটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক।
জাতীয়তাবোধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণার উৎসের প্রতীক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সলঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের দক্ষিন ও সমাজ কল্যাণ সমিতির পুর্ব-উত্তর পাশে তৎকালিন সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থান নির্ধারণ করে সেখানে ইটদিয়ে ঘিরে পাকা বেদী নির্মাণ করেছিলেন তৎকালিন সময়ের সলঙ্গার টকবগে উদীয়মান তরুণ-ছাত্র-যুবকরা। ওই বেদীর উপর কখনও ব্রেঞ্চ এবং কখনও কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে ভাষা শহীদদের আত্নার প্রতি ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করতো তরুণ-ছাত্র-যুবকসহ সকল রাজনীতিক দল,সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু অবৈধ দখলকারীদের দখল প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতায় তা আজ অবৈধদখলকারীদের কবলে চলেগেছে। এটা উদ্ধারের জন্য প্রশাসন বা সলঙ্গার সচেতন মহলের নেই কোন উদ্যোগ। যে কারণে কালের বিবর্তনে নিশ্চিহৃ হয়েগেছে ইটদিয়ে পাকা করে স্থাপিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদী। এখন সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নামক স্থাপনার কোনই অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্ব একেবারেই বিলিন হয়েগেছে।
কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন রাজনীতিকদল বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু সলঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গাটি উদ্ধার পুর্বক সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। পক্ষান্তরে রাজনীতিক দলসহ বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণের নেতারা নিজেদের মধ্যে লজ্জা লুকিয়ে রেখে ২১ ফ্রেরুয়ারির দিন ভোরে স্ব-স্ব সংগঠণের পক্ষ থেকে সলঙ্গা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। সলঙ্গার বিজ্ঞজনদের নিকট নতুন প্রজন্মের প্রশ্ন? সলঙ্গা ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসে যদি শহীদ মিনারটি না থাকতো তাহলে রাজনীতিক দলের নেতারাসহ পেশাজীবী সংগঠণগুলো কোথায় গিয়ে ভাষা শহীদদের আত্নার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপণ করতেন। এইতো হলো ঐতিহাসিক সলঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হারিয়ে যাবার ইতিহাস। অথচ আমরা সলঙ্গাকে বলি ঐতিহাসিক সলঙ্গা,ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সুঁতিকাগার সলঙ্গা,আবার ইতিহাসের ধারক-বাহক ও হাজারো ইতিহাসের স্বাক্ষীও বলে থাকি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ইতিহাস খ্যাত সলঙ্গা থানা সদর বাজারের ৩৩.৩৩ একর সরকারি খাস জায়গাসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গাটিও আজ অবৈধ দখলকারীদের কবলে। সেখানে আজ গড়ে উঠেছে ফার্নিচারের বাজার ও রিকসা গ্যারেজ।
উল্লেখ্য যে,বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৮ সালে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯ বাংলা সাল) যারা আন্দোলনে নামেন,তাদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে আবুল বরকত,আবদুল জব্বার ও আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রযুবা নিহত হন। এর পরেই,বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
যে চেতনায় উদ্দীপিত হয়ে বাঙ্গালিরা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আজ তা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। বিশ্বব্যাপী জাতিগোষ্ঠীর ভাষাগত অধিকার উদযাপন ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। অথচ ভাষা শহীদদের স্মরণে সলঙ্গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গাটি উদ্ধার ও শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কোন রাজনীতিকদল ও সচেতন মহলের কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে সলঙ্গার সচেতন মহলের প্রশ্ন? প্রশাসন ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মরণে তৎকালিন সময়ে স্থাপিত সলঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গাটি উদ্ধার পুর্বক সেখানে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমন প্রত্যাশা সলঙ্গাবাসীর।
Leave a Reply