আলী আশরাফ,সিরাজগঞ্জ:
সলঙ্গায় সাদা খাতা জমা দিয়ে আয়া পদে মেধা তালিকায় ১ম স্থান অধিকার করেছেন এক প্রার্থী। সাদা খাতা জমা দেওয়ার পর নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা সাদা খাতায় লিখে সর্বোচ্চ নাম্বার দিয়ে আয়া পদে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছেন নিয়োগ কমিটি। নিয়োগ বোর্ডের ডিজি প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম ও উল্লাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম শামসুল হক এর সার্বিক সহযোগিতায় কোন এক শিক্ষক দ্বারা সাদা খাতায় লিখে দেওয়া হয়েছে বলে চাকুরী প্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে পরীক্ষা খাতার সাথে চাকুরী প্রাপ্তির ব্যক্তির হাতের লেখা মিলিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন চাকুরী প্রত্যাশীরা। অপরদিকে ৩টি পদে স্কুলের সভাপতির বিরুদ্ধে ৪০ লাখ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। নিয়োগ বানিজ্য রোধ ও পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে উল্লাপাড়া উপজেলার শলী বনানী উচ্চ বিদ্যালয়ে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ে শলী বনানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩টি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য গত ১৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জুন ২০২৩ইং তারিখে আয়া, অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষন পর আয়া পদে শিল্পী নামে এক পরীক্ষার্থী সাদা খাতা জমা দেন। ভাইভা শেষে খাতা জমাদানকারী শিল্পী খাতুনের নাম মেধা তালিকা ১ম হওয়ার আয়া পদে আরো ৩জন পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন।

আয়া পদে তিন পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে পরীক্ষার পূর্ব রাত্রীতে সভাপতির পছন্দের প্রার্থীর সাথে কথা বলে রেখেছিল। সভাপতির কথা অনুযায়ী শিল্পী খাতুন পরীক্ষার রুমে সাদা খাতা জমা দেন। আমাদের সামনে শিল্পী খাতুন খাতায় কিছু না লিখে পরীক্ষার কিছুক্ষন পর পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে দেন। পরবর্তীতে ফলাফল ঘোষণার সময় ডিজির প্রতিনিধি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিল্পী খাতুনকে মেধা তালিকায় ১ম স্থান দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন।

লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর তাদের পছন্দের তিন প্রার্থীর কাছ থেকে ৪০লাখ টাকা নিয়েছেন। এজন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখেই শুধুমাত্র পছন্দের প্রার্থীকে পাঠানো হয়েছে প্রবেশপত্র। এই নিয়ে উপজেলার বাজার ও চায়ের দোকানে চলছে আলোচনার ঝড়। এই অবৈধ নিয়োগ স্থগিত ও ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের জোড় দাবী করছে স্থানীয়রা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাফর বলেন, যথাযথ নিয়মে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। হবে। কোন পরীক্ষার্থীর খাতা লিখে দেওয়া হয়নি। নিয়োগে কোন টাকা পয়সা লেনদেন হয়নি। কেউই আমার আত্মীয় নয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীকেই ডাক ঘরের মাধ্যমে প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছে, তাদের অভিযোগ সত্য নয়। যোগ্যতা অনুযায়ী ও সঠিক নিয়মে পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম শামসুল হক বলেন, নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, নিয়ম মেনেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি পক্ষ ফাঁসানোর জন্যে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করেছেন। তবে এ শুক্ষা কর্মকর্তা সাদা খাতা জমা দেওয়ার বিষয়ে এড়িয়ে যান।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল হোসেন বলেন, নিয়োগে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। তবে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি আমি পেয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি শিক্ষা বোর্ড খতিয়ে দেখবে। তবে আমার নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে আমি বিষয়টি দেখবো।