নজরুল ইসলাম:
নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের রিভারভিউ আইডিয়াল কলেজে তিন পদের নিয়োগ পরীক্ষা। শিয়ালকোল ইউনিয়নের চন্ডিদাসগাতী এলাকার এ প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ম বর্হিভূতভাবে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হয়।
গত (১৭ নভেম্বর) শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ইতিহাস ভবনে হিসাব রক্ষক, ল্যাব সহকারি ও নিরাপত্তা প্রহীর পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনী তফসিল চলমান অবস্থাতেই অবৈধভাবে এ নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে প্রতিটি পদের বিপরীতে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার।
পরীক্ষার সময় সরেজমিনে গিয়ে, লিখিত পরীক্ষার সময় অনুপস্থিত দেখা যায় সভাপতি ফিরোজ ভুইয়াসহ ম্যানেজিং কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্যকে। মৌখিক পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই হাজিরা শীটে স্বাক্ষর নেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। সম্রাট নামে পরীক্ষার্থীকে হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমন নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চন্ডিদাসগাঁতী এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, কলেজটির সভাপতি প্রভাবশালী ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফিরোজ ভুইয়া। এর আগে যত নিয়োগ হয়েছে, সবগুলোর পরীক্ষা তিনি নিয়ম বর্হিভূতভাবে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে নিয়েছেন। অনিয়মের কারণে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ার ভয়েই তিনি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সকালে এ প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষক কাম অফিস সহকারি পদে ৫ জন, ল্যাব সহকারি ৮ জন ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে ৫ জন পরীক্ষার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রতিটি পদে ১ জন করে নিয়োগ করা হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিটি পদের বিপরীতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে নিয়োগ বানিজ্য করেছেন কলেজের সভাপতি ফিরোজ ভুইয়া ও অধ্যক্ষ দীপক কুমার ভদ্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ প্রার্থীরা কোন কথা বলতে রাজি হন নাই। তবে মো. শাহীদুর রহমান নামে এক নিরাপত্তাকর্মী প্রার্থী বলেন, আমি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। কলেজের লোকজন আমাকে পরীক্ষা হবে না বলে বের করে দিয়েছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ দীপক কুমার ভদ্র আগে থেকে কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয় নাই বলে দাবী করে বলেন, পরে কমিটি বসে যারা নিয়োগে টিকবে তাদের কাছ থেকে কলেজ উন্নয়নের জন্য টাকা নেবে। কত টাকা নেবে তা নিয়ে আলোচনাও হয় নাই সিদ্ধান্তও হয় নাই।
নিজেদের প্রতিষ্ঠান রেখে শহরে নিয়োগ পরীক্ষা কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে সব নিয়োগ এই কলেজেই হয়েছে। ডিজির প্রতিনিধি ভেন্যু ঠিক করেছেন। বিধি মোতাবেক ডিজির প্রতিনিধি ভেন্যু নির্ধারণ করতে পারে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং ওনার সাথে কথা বলতে বলেন।
প্রার্থী আগে থেকেই সিলেকশন করা কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কোন সিলেকশন করি নাই। সিলেকশন করবেন ওনারা।
ম্যানেজিং কমিটির তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে এ অবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তফসিল নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। ওটা একটা সাইট, এটা একটা সাইট। এ কমিটির মেয়াদ আগামী জানুয়ারি শেষ হবে। নিয়োগ পরীক্ষার সময় সভাপতির অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অনুমতি নিয়েই পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা নেবে ডিজির প্রতিনিধি।
কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফিরোজ ভুইয়া বলেন, কলেজটা গরীব এলাকার লোকজও গরীব। আমি চেষ্টা করছি কলেজটা উন্নতি করার জন্য। নিয়োগ বানিজ্য আমরা করবো না। আলোচনা করে ওরা যদি কিছু দিতে চায় দেবে। ডনেশনের কোন রেট নেই। প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সিকিউরিট এ জন্যই এখানে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষার আগেই হাজিরা শীটে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ওটা চেঞ্জ করে দিয়েছি। ওটা ভুল হয়েছিল।
ডিজির প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টি.এম সোহেল বলেন, আমরা নিয়োগ পরীক্ষা নেব, পরীক্ষা শেষে যারা প্রথম হবে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করবো। কিন্তু নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার কাজী সলিম উল্লাহ বলেন, কোন অনিয়ম দেখলে আপনারা সেগুলো লেখেন। নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply