নিজস্ব প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগীদের মাঝে হাঁস বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অনিয়মের কারণে প্রাণিসম্পদ অফিস ঘেরাও, সুফলভোগিদের তোপের মুখে বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে জানাযায়, উক্ত প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৫’শ টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে হাঁস বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আওতায় একটি সুফলভোগি পরিবার পাবে ২০টি হাঁস। বিতরণকৃত একেকটি হাঁস হবে খাকি ক্যম্বল জাতের, যার বয়স ৫০ দিন, ওজন হবে ২০টি হাঁসের জন্য মোট ১৬ কেজি। বিতরণ কাজের দায়িত্ব পায় জেন্টেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার ০৮ জুন ২০২৩ সকাল ১১টায় বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু অভিযোগ ওঠে ২০ টি হাঁসের ওজন ১৬ কেজির জায়গায় বিতরণ করা হয় ৫-৭ কেজি ওজনের হাঁসের বাচ্চা।
একপর্যায়ে সুফল ভোগীরা প্রাণী সম্পদ অফিস ঘেরাও করে এবং উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে অনিয়ম বিষয়ে প্রশ্ন করে। এর মাঝেই সটকে পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনেরা।
সুফলভোগীদের মধ্যে উপজেলার সোনাখাড়া ও ধামাইনগর ইউনিয়নের শিবপুর, বড়াইল, ধলজান এলাকার সুবাস, বিজয়, জয়দেব, রমেশ, ধিরেন, চঞ্চলসহ সকল সুবিধাভোগীরা জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রথমে তাদের হাঁস পালনে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এর পর আজকে তাদের ২০ টি করে হাঁস দেওয়া হয়।
সুফল ভোগীরা আক্ষেপ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান,”আমরা দিনমজুর মানুষ, দিন আনি দিন খাই, আমাদের কামলা কামাই দিয়ে আজকে ৩-৪ শ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে হাঁস নিতে এসেছি। কিন্তু আমাদের এই হাঁস বিতরণে অনিয়ম করেছে তাই আমরা প্রাণী সম্পদ অফিস ঘেরাও করেছি।”অনেকের অভিযোগ,২০টি হাঁসের বাচ্চা দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের দেওয়া হয়েছে ১৬টি করে। । স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিনিধিদের কয়েকজন এই অভিযোগের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের রায়গঞ্জের কর্মকর্তাদের দোষারোপ করেন। এদিকে সোনাখাড়া ইউনিয়নে ২৬৯ জনের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
রায়গঞ্জের প্রাণিসম্পদ আধিকারিকগণ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সোনা খাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টাকা খেয়ে সুফল ভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা সহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জনাব, জাহাঙ্গীর আলম মুন্নু সাংবাদিকদের জানান, তালিকা প্রনয়ণ করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গন। এ বিষয়ে তাদের কোন দুর্নীতির সুযোগ নেই বলে জানান।
এদিকে, তালিকা প্রণয়নে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে সোনা খাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা কামাল রীপন জানান, ১০ বছর আগে হতদরিদ্র আদিবাসীদের ভিতর থেকে একটি তালিকা প্রনয়ণ করা হয়েছে। তিনি বলেন,সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের লোকজনই এই তালিকা প্রনয়ণ করেছেন।
আদিবাসী ইউনিয়নের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, কাদের তালিকা কিভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে তা তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ওয়ালিউল ইসলাম জানান, হাঁস বিতরণে অনিয়মের সাথে তিনি জড়িত নন। তিনি জানান, হাঁস বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ঠিকাদার তার লোকজন সহ তাৎক্ষণিকভাবে পালিয়ে যায়।
আপনি পালালেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা তেড়ে আসায় ভয় পেয়ে আমিও অফিস ত্যাগ করি। ভেড়াও গরু বিতরণেও ইতোপূর্বে ওয়ালিউলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তিনি সকল কেনাকাটায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে যোগসাজস করে ব্যাপক দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। কি সরবরাহ করার কথা আর কি সরবরাহ করা হচ্ছে সেসব বিষয় খতিয়ে না দেখে তিনি টাকার বিনিময়ে বরাবরই ঠিকাদারদের কাগজে অনু স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply