নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রেম মানে না কোন বাধা। মাঝে মধ্যেই প্রেমের টানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসছেন ভালোবাসার মানুষের কাছে তরুণ-তরুনীরা। এমনই একজন কুমারী সেজে ভারত থেকে আসা নার্গিসা বেগম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জুয়েল নামে এক ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করছেন। নার্গিসার ঘরে ৮ বছরের শিশু সন্তানের জন্যই স্ত্রীকে ফিরে পেতে ভারত থেকে উল্লাপাড়ায় ছুটে এসেছেন তার স্বামী ফজলুর রহমান মীর।
শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুরে উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীকে ফিরে পেতে ভারত থেকে উল্লাপাড়ায় আশার বিয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা ফজলুর রহমান মীর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে উল্লাপাড়া থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।
জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সুত্রে প্রেমের টানে স্বামী ফজলুর রহমান মীর ও ৮ বছরের শিশু সন্তান জিসান মীরকে ছেড়ে ভারত থেকে পালিয়ে এসে স্বামী ও সন্তানের কথা গোপন করে কুমারী সেজে উল্লাপাড়ার দাদপুর গ্রামের ইরান সরকারের ছেলে জুয়েল সরকারকে (২৪) বিয়ে করেন নার্গিসা বেগম (২৯)। তবে এখানে এসে তিনি নিজের নাম নাইসা মল্লিক নামে পরিচয় দিয়েছেন। গত ১ জুন বয়সে ৫ বছরের ছোট জুয়েল সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।
এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার দু-দিন পরই ভারতের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে নার্গিসা বেগমের স্বামী ও সন্তান রয়েছে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হয়।
সংবাদে বলা হয়, ১২ বছর আগে বাঁকুড়া জেলার ফজলুর রহমান মীরের সঙ্গে বিয়ে হয় দানগড় ধারেশা মল্লিক পাড়ার বাসিন্দা নার্গিসা বেগম মল্লিকের। মীর জিসান নামে তাদের ৮ বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। হঠাৎ নিখোঁজ হন ওই গৃহবধূ। এই মর্মে দমদুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন গৃহবধূর স্বামী ফজলুর রহমান মীর।
জুয়েলের বাবা ইরান সরকার বলেন, আমরা তো এতকিছু জানতাম না। ভেবেছিলাম মেয়েটি অবিবাহিত। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর জানতে পারি ভারতে তার স্বামী ও সন্তান আছে। যেভাবেই হোক মেয়েটি এখানে এসেছে বাংলাদেশের আইন মোতাবেক বিয়েও হয়েছে। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। আমরা তাকে ত্যাগ করতে পারি না। তবে ভারত থেকে আসা স্বামীর সঙ্গে তিনি যদি যেতে চান। আমাদের কোন কিছু করার নেই।
উল্লাপাড়ার দূর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য এবাদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আসা মেয়েটি বিবাহিত বলে আমরা পরে জানতে পেরেছি। গতকাল ভারত থেকে ওই নারীর সাবেক স্বামী এসেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা হচ্ছে। তবে ভারতের স্বামীর সঙ্গে ওই নারী যেতেও চাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতে রেখে আসা নার্গিসার স্বামী ও এক মহিলা কাউন্সিলর থানায় আসেন।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে যেতে চায়, আপনারা একটু সহযোগিতা করেন। পরে তার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। একই সময় জুয়েল সরকারকে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। তিনি চেয়ারম্যানকে বলেন, যদি তার স্ত্রী যেতে চায়, তাহলে কোনো আপত্তি নেই।
পরে ভারত থেকে আসা নারীর সঙ্গে পুলিশ কথা বলে জানতে পারে, তার ভিসা, পাসপোর্ট, ডিভোর্স ও বিয়ের কাগজপত্র আছে। তিনি পুলিশকে বলেন, তার ভারতীয় স্বামী ফজলুর রহমান মীর আগেও একটা বিয়ে করেছেন। তার বড় বড় সন্তান রয়েছে। প্রতিনিয়তই মদ্যপ হয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। তাকে ডিভোর্স দিয়ে বৈধ পথে এখানে এসে জুয়েল সরকারকে বিয়ে করেছেন।
ওসি আরও বলেন, আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Leave a Reply