আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জ ঃ
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাটে পলাশডাঙ্গা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে ঐতিহাসিক ভদ্রঘাট যুদ্ধ দিবস উপলক্ষে
শনিবার (১৭ জুন) দিনব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিনকে স্মরণ করে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ।
মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির আয়োজিত এই মিলন মেলা ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বিমল কুমার দাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, গীতা থেকে পাঠ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জাতীয় ৪ নেতাসহ সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। এসময় ভদ্রঘাটে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনারক্ষায় “স্মৃতি সৌধ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর” নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সিরাজগঞ্জ -২ সদর-কামারখন্দ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না’কে জানান সংগ্রামী অভিনন্দন।
সাথে সাথে এই কাজের উদ্যোগ গ্রহনকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী সরকারকে মুক্তিযোদ্ধারা জানায় শ্রদ্ধা।
মিলন মেলায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মহান স্বাধীনাতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, একাত্তরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উদাত্ত আহবানে এদেশের দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পড়ে তাদের মাতৃভূমি স্বাধীনতা সংগ্রামে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ফিরে স্বাধীন করে আমাদেও প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের। জনপ্রিয় ছাত্রনেতা প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জ্জার নেতৃত্বে এই বাহিনীর দেশের অন্যতম বৃহত্তম গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার দল হিসেবে গড়ে ওঠে। ৭১ সালে কামারখন্দ উপজেলার কালিবাড়ি ভদ্রঘাট, জাঙ্গাইলা গাতী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এই পলাশ ডাঙ্গা যুবশিবির এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সন্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং পাক বাহিনীকে পরাজিত করে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরের ১৭ জুন সিরাজগঞ্জের ভদ্রঘাটে পাক হানাদার বাহিনী আক্রমন করলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের এই আক্রমনে প্রতিহত করে। দীর্ঘ সময় সন্মুখ যুদ্ধ শেষে স্বৈরাচারি পাক হানাদার বাহিনী আত্মগোপন করতে বাধ্য হয় । কিন্তু এই ভয়াবহ যুদ্ধে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহত বা শহিদ হননি। সে দিনের ভদ্রঘাট এলাকার প্রথম যুদ্ধ স্মৃতি আজও বীর মুক্তিযোদ্ধা তথা মুক্তিকামী মানুষদের হ্রদয়ে নাড়া দেয়। আলোচনা সভায় ৭১ এর চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতৗকে ভোট দেবার আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন,পলাশ ডাঙ্গার কমান্ডার ইন-চীফ (সিএনসি) গাজী সোহরাব আলী সরকার, সাবেক উপজেলা কমান্ডার, বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাদত হোসেন ফিরোজী,বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সুকুমার চন্দ্র দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শামছুল আলম,বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ টুংকু, বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাখন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ সরকার,বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি, কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান এস. এম শহিদুল্লাহ সবুজ, কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শেখ, ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ সম্পা রহমান , ভদ্রঘাট ইউপি’র চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক।
তাছাড়াও ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার জন্য যাদের বাড়িঘর লুটপাট, পোড়ানো হয়েছিলো হারাতে হয়েছিলো সুশীল কুমার সাহা, সাধন কুমার বসাক, মোছাঃ হাসিনা খাতুন, প্রফুল্ল কুমার সাহা প্রমুখের স্বজনদের।
সিরাজগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম জানান, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধর স্মৃতি জাদুঘর ও ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে স্মৃতি সৌধ সমাপ্ত হয়। এছাড়াও ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরুর প্রারম্ভেই কয়েক তরুন ছাত্র ও যুব নেতার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। তদানিন্তন সময়ে তরুন ছাত্র নেতা আজিজ সরকারের প্রস্তাবিত নামে গঠিত পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরে নেতৃত্ব পরবর্তীতে গ্রহণ কওে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে প্রয়াত জননেতা সে সময়ে যুব নেতা আব্দুল লতিফ মির্জা। তার নেতৃত্বে দলটি বিশাল গেরিলা দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এবং ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বেসামরিক বাহিনী হিসেবে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির পাক বাহিনীর বেলুচ রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কওে পাকিস্তানী বাহিনীর ওই বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানীকে নিচিহ্ন করে একদিনের যুদ্ধ জয়ের রেকর্ড অর্জন করে।
Leave a Reply