আলী আশরাফ,সিরাজগঞ্জঃ
দৈনিক জয় সাগর পত্রিকা গত ১৭ জুলাই ২০২৩ইং তারিখে ” পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের কারিশমায় থানায় অন্তর্ভূক্ত হল না হত্যা মামলাঃ পিতা হত্যার বিচার পাচ্ছে না শিশু মরিয়ম” শিরোনামের প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী ফাতেমা। আলাতের নির্দেশে থানায় মামলা এন্ট্রি ও ময়না তদনৃতের জন্য লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। সর্বপরি পিতা বিচার হত্যার বিচার পাচ্ছে শিশু মরিয়ম।
মৃতের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) দুপুরে ছোনগাছা ইউনিয়নের ডিগ্রিপাড়া কবরস্থান থেকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম রাকিবুল হাসানের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজওয়ানুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শিমুল তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
সদর থানার এসআই জসিম উদ্দিন বলেন, আব্দুল মোমিনকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
মামলায় বাদীর অভিযোগ, গত ১১ জুলাই তার স্বামী আব্দুল মোমিন নিজ বাড়িতে ঘর তোলার জন্য মাটি কাটছিলেন। এ নিয়ে শ্বশুড় ও দুই বড় ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বড় ভাই আব্দুল মালেক ও আব্দুল মান্নান ইউক্যালিপটাস ডাল দিয়ে আব্দুল মোমিনকে বেধড়ক পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। মারধরের পর তাকে নিয়ে নিজেদের হেফাজতে লুকিয়ে রাখে। গত ১৪ জুলাই অবস্থার অবনতি হলে তাকে শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন দুপুরেই আব্দুল মোমিন মারা যান।
মৃত্যুর পর তরিঘরি করে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তখন বলা হয়, মরদেহ ডোম দিয়ে কাঁটাছেঁড়া করলে ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন হবে। থানাতেও জানাতে নিষেধ করা হয়। এরপর মোমিনের দাফন সম্পন্ন হয়।
গত ১৬ জুলাই তারিখে এই হত্যা মামলাটি মিমাংসা করতে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্না, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, ইউ,পি সদস্য জহুরুল ইসলাম এবং পিপুলবাড়িয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামসহ এলাকার মুরুব্বী নিয়ে বৈঠক বসলে সেখানে বাদী তার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন।
পরে গত ১০ আগষ্ট তিনজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, মরদেহটি উত্তোলনের পর ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার, ১১জুলাই ২০২৩ইং তারিখে ডিগ্রীপাড়া গ্রামে ফরজ আলীর পু্ত্র নুরুল ইসলাম (৬৫)এর সাথে তার আপন পুত্র আব্দুল মোমিন (৩৫) সাথে মাটি কাটা নিয়ে কথাকাটি হয়। কথাকাটির একপর্যায়ে নুরুল ইসলাম সহ তার আরোও দুই সন্তান আব্দুল মালেক (৪০) ও আব্দুল মান্নান (৪৩) লাঠিসোটা নিয়ে আব্দুল মোমিননকে বেধরক মারপিট করে। বেধরক মারপিটে আব্দুল মোনিন অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সহোদর ভাইরা উদ্ধার করে লুকিয়ে রাখে।অবস্থার অবনতি হলে ১৪ জুলাই আব্দুল মোমিনকে শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতাল এন্ড কলেজে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল মোমিন শুক্রবার, ১৪জুলাই ২০২৩ইং তারিখে দুপুর ২টার দিকে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুবরনের পর হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে তড়িঘরি করে লাশ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার সহোদর ভাইয়েরা। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর নিহত স্ত্রীকে জমি লেখে দেওয়ার লোভে হত্যাকারীদের বাঁচাতে দাফনের পূর্বে পিপুলবাড়িয়া বাজারে চলে বাগবাটি ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ছোনগাছা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র দেনদরবার। খবর পেয়ে নিহতের বাড়িতে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিতে আসলে জমি লেখে দেওয়ার লোভে স্ত্রী কোন অভিযোগ করেন না। স্ত্রীর কোন অভিযোগ না পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ নিয়ে আসে না পুলিশ। এরই মধ্য তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন কার্য্য সম্পন্ন করে হত্যাকারিরা।
১৬জুলাই ২০২৩ইং তারিখে নিহতের বাসায় হত্যা মামলা মিমাংসা করার লক্ষে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলন, ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম সহ এলাকার মুরুব্বিরা সামাজিক শালিসে তা মিমাংসা করতে পারে না। সামাজিক শালিসে মিমাংসা না হওয়ায় নিহতের স্ত্রী বলেন, আমার শ্বশুর নুরুল ইসলাম, ভাসুর মালেক ও মান্নান আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি হত্যার বিচার চাই।
Leave a Reply