সেলিম তালুকদার, শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ: একটা সময় আমাদের বলা হতো ‘মাছে ভাতে বাঙালি।’ কিন্তু মাছ ভাতের সেইদিন এখন আর নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মাছের সেই সোনালী অতীত। দেশের আনাচে-কানাচে কোথাও এখন আর মাছের সহজলভ্যতা নেই বললেই চলে।
এই অবস্থায় বরফ ছাড়া দেশি টাটকা মাছ পাওয়াটা অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মত। কিন্তু যারা সদ্য নদী থেকে ধরে আনা দেশি টাটকা মাছের স্বাদ নিতে চান তারা সময় করে চলে আসতে পারেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের ধলাই এবং বড়াল নদীর মোহনা রাউতরা সুইচগেটে।
এখানে পাওয়া যাবে দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, টাকি, শোল, মলা, ঢেলা, বাটা, আইড়, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, বাতাশি, বড় বাইন, তারা বাইন, শালবাইন, বোয়ালসহ আরও হরেক রকম দেশি তাজা মাছ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরাসরি নদী থেকে ধরে আনা মাছ কেনার সুযোগ রয়েছে এখানে। তাইতো প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটে আসছেন মাছ কিনতে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় সরেজমিন রাউতরা সুইচগেট মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায় উৎসবের আমেজ।
জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে নিয়ে আসছেন ডাঙায়। আড়ৎদাররা নিলামে উঠাচ্ছেন সেই মাছ। আর পছন্দমতো দাম হাকিয়ে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতা এবং আড়ৎদার সবাই খুশি। কারণ কিছুদিন হলো এখানে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে, বিধায় সস্তা দামে বিক্রি করেও জেলেদের পকেটে উঠছে অনেক টাকা। আর ক্রেতারা সন্তুষ্ট সস্তায় পছন্দ মতো টাটকা মাছ কিনতে পেরে।
মৎসজীবি শাহাদাৎ হোসেনের জানান, ‘কিছুদিন হলো আমরা প্রচুর মাছ পাচ্ছি। আশাকরি আরো কিছুদিন এঅবস্থা থাকবে।’
শাহজাদপুর থেকে মাছ কিনতে এসেছেন, রাজিব আহমেদ রাসেল, হিরু খন্দকার এবং তাদের বন্ধু জাহিদ হাসান মুন্না। তারা সম্মিলিত ভাবে আট হাজার টাকার বোয়াল, বাইন, সঁরপুটি সহ বেশ কয়েক পদের মাছ কিনেছেন।
রাজিব আহমেদ রাসেল জানান, ‘রাউতরা প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে, এমন খবর ফেসবুকে দেখে আমরা এখানে এসেছি।’ তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী দামে মাছ কিনতে পেরেছেন তারা।
আড়তদার মনসুর শেখের মুখে চওড়া হাসি দেখেই বোঝা যায় তার ব্যবসা বেশ ভালো যাচ্ছে। তিনি জানান, ‘নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে, যার কারণে মাছের দাম অনেক কম। তবুও হলদাররাও (জেলেরা) খুশি, কেতারাও (ক্রেতা) খুশি, আবার আমরাও কয়ডা টেহা পাচ্ছি, আমরাও খুশি।’
এখানে মাছের মান অনুযায়ী দাম অনেকটাই কম। তবে নির্ধারিত কোনো মূল্যতালিকা না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছে মতই দাম হাকান। আপনি বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে দাম-দর করতে পারলে মান অনুযায়ী অনেকটা কম দামেই পাবেন এখানকার মাছ।
রাউতরা সুইচগেটে কিভাবে যাবেন?
শাহজাদপুর দিলরুবা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা যোগাযোগ পোতাজিয়া হয়ে যেতে হবে চার কিলোমিটার পথ। মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কারেও যাওয়া যায়।
Leave a Reply