দেশজুড়ে : জেলার সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট রামসাগর দিঘী। যা সারা বছর পর্যটকদের পদ চারণায় মুখরিত থাকে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার।সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুর সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত রামসাগর দিঘীটির পশ্চিম পাড়ের মধ্যখানে একটি ঘাট ছিল। যা বনবিভাগের কার্যক্রমে বিলুপ্ত হয়ে , যার কিছু অবশিষ্ট অংশ এখনও রয়েছে। বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথর স্ল্যাব দ্বারা নির্মিত ঘাটটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল যথাক্রমে ৪৫.৮ মিটার এবং ১৮.৩ মিটার। দিঘীটির পাড়গুলো প্রতিটি ১০.৭৫ মিটার উঁচু।দিনাজপুর সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামের প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রামসাগর নিয়ে অনেক ঐতিহ্য ও অল্প কাহিনী। ঐতিহাসিকদের মতে, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ (রাজত্বকাল: ১৭২২ থেকে ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ) পলাশীর যুদ্ধের আগে (১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) এ রামসাগর দিঘি খনন করে ছিলেন। তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রামসাগর। জনশ্রুতি রয়েছে, দিঘীটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০,হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। দিঘীটি খনন কাজে ১৫ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল। রামসাগর দিনাজপুর বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গত ১৯৬০ সালে দেয়া হয়েছে । গত ১৯৯৫-৯৬ সালে এ দিঘীকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। গত ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।এলাকার জনসাধারণের জনশ্রুতি মতে এ দিঘী নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোককথা। কথিত আছে, গত ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রচ- এক খরা দেখা দিলে পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে হাজার হাজার প্রজা। এসময় দয়ালু রাজা প্রাণনাথ স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি পুকুর খনন করেন। মাত্র ১৫ দিনে এর খনন কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু সেই পুকুর থেকে পানি না ওঠায় এক সময় রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন যে, তার একমাত্র ছেলে রামকে দীঘিতে বলি দিলে পানি উঠবে। স্বপ্নাদিষ্ট রাজা, দীঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করেন। তারপর এক ভোরে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোশাকাচ্ছাদিত হয়ে হাতির পিঠে চড়ে যাত্রা শুরু করলেন সেই দীঘির দিকে। দীঘির পাড়ে পৌঁছে যুবরাজ রাম সিঁড়ি ধরে নেমে গেলেন মন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গে দিঘীর তলা থেকে অঝোর ধারায় পানি উঠতে লাগল। চোখের পলকে যুবরাজ রামনাথসহ পানিতে ভরে গেল বিশাল দীঘি।আরও একটি লোককাহিনী শোনা যায়। দিঘি খনন করার পর রাজা রামনাথ পানি না উঠলে স্বপ্ন দেখেন রাজা দিঘীতে কেউ প্রাণ বিসর্জন দিলে পানি উঠবে। তখন রাম নামের স্থানীয় এক যুবক দিঘিতে প্রাণ বিসর্জন দেয়। পরবর্তিতে রাজার নির্দেশে সেই যুবকের নামে দিঘীর নামকরণ করা হয় রামসাগর।এসব মুখোরচক কাহিনী রামসাগরকে ঘিরে অনেক প্রচলিত আছে। তবে রামসাগর একটি দেশের পর্যটক সম্পদ। এ সম্পদ সংরক্ষণে সরকার তথা সকলকে দয়িত্ব¡ভার গ্রহণ করতে হবে। তবে ঐতিহ্যবাহী রামসাগর ফিরে পাবে সৌন্দর্য।
Leave a Reply