নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জঃ
ছয় ব্যক্তি কাজ শুরুর আগে মৃত্যু বরণ করলেও এলজিইডি’র টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের হাজিরা সিটে নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের জন্তিপুর গ্রামে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে।
তথ্য অনুসন্ধানসূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ এলজিইডি’র আওতায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজে গত রোববার (১৮জুন) হাজিরা সিটে মৃত্যু ব্যক্তির নামে হাজিরা স্বাক্ষর দেখা যায়। আরো দেখা যায়, প্রকল্প সময়ে তারা ১৩ দিন কাজ করেছেন এবং স্বাক্ষর দিয়ে প্রত্যেক ব্যক্তিই ২৬ হাজার ৬শ দুই টাকা উত্তোলন করেছেন।
অফিস সূত্রে জানা যায়, এলজিইডি’র টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে উত্তর ভদ্রবতী এলসিএস ৮ নং গ্রুপে ৯ নং সদস্য মৃত ইউসুফ আলী পুত্র মৃত মোজাফর, এলসিএস ১১নং গ্রুপের ২১ নং সদস্য মৃত কমেছ আলীর পুত্র মৃত আতা, ১২ নং গ্রুপের ৫ নং সদস্য মৃত ফজের আলী ছেলে মৃত মজনু এবং ২০ নং সদস্য মৃত বয়েন আলীর ছেলে মৃত কাজেম, ১৬ নং গ্রুপের ৪ নং সদস্য মৃত আফসার আলীর ছেলে মৃত শফি, ৫ নং সদস্য মৃত হামেদ আলীর পুত্র মৃত আফসার। এরা প্রত্যেকে প্রকল্প সময় হতে ৫ থেকে ১১বছর আগেই মারা যান এবং প্রত্যেকেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার জন্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
আরো জানা যায়, টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজের মধ্যে ৬০ শতাংশ খাল খননের কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এলজিইডি, ভূগর্ভস্থ পানির উপড় চাপ হ্রাস করে ভূগর্ভস্থ পানি সেচ এর আওতায় তাড়াশ উপজেলার বারুহাস দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও তালম ইউনিয়নের উত্তর ভদ্রবতী উপ-প্রকল্পের খাল পুনঃখনন কাজে বারুহাস ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ থেকে তালম ইউনিয়নের রানীরহাট ব্রিজ পর্যন্ত কাজে ৩০ শতাংশ লেবার দিয়ে এবং বেকো দিয়ে ৭০শতাংশ কাজ শেষ করার কথা।
জানা যায়, খাল দুটির পুনঃখনন কাজ স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সমবায় অধিদপ্তরের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে ৪৪টি এলসিএস গ্রুপের ১১’শ সদস্যের মাধ্যেমে খাল পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রত্যেক গ্রুপে প্রায় ৯ লক্ষ ৪৬হাজার টাকা যার খাল খনন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে উত্তর ভদ্রাবতী প্রকল্পের ১২ নং এলসিএস গ্রুপের ২০ নং সদস্য মৃত কাজেমের ছেলে আশরাফুল আলী জানান, আমার পিতা মারা গেছে ২০১২ সালে । ওরা আমার মৃত বাবার নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে টাকা তুলছে। হাজিরা সিটে আমার নাম ও স্বাক্ষর, টাকাও নিয়েছে দেখছি। আমরা এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি এ রকম কাজ যে করেছে তাদের বিচার চাই।
১২ নং গ্রুপের ৫ নং সদস্য মৃত মজনুর ছোট ভাই আমিরুল জানায়, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমার ভাইয়ের নামে খাল খনন প্রকল্পে টাকা তুলেছে অথচ আমার ভাই ৫ বছর আগেই মারা গেছে। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে সমবায় সমিতির উত্তর ভদ্রবতী প্রকল্পের ১২ নং গ্রুপের সদস্যরা জানান, খাল খনন হচ্ছে আমরা দেখছি, আমরা এ কাজে সম্পৃক্ত নই। এ অপকর্মের সঙ্গে জরিত ব্যক্তিদের চান।
টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি হাফিজু রহমান জানান, খাল খনন ওই প্রকল্পে ১১’শ জন সদস্য রয়েছে, আমি আপনাকে এ ব্যাপারে এখন কিছুই বলতে পারব না। আপনি অফিসে আসেন আগামীকাল।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, আমি নতুন এসেছি, আপনি অফিসে আসেন ফাইল দেখে বিস্তারিত আপনাকে বলতে পারব।
প্রকল্প পরিচালক আবু হানিফকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Leave a Reply