নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য পদ লাভ ও রক্ষায় অভিনব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিয়ালকোল যুব সংসদের কথিত, ভুয়া সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিনিধি মো: সুলতান মাহমুদ। তার সদস্য পদ প্রাপ্তির খবরটি এতদিন গোপন থাকলেও সম্প্রতি জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় ও ক্লাবের ভূয়া একটি কার্যকরি কমিটি প্রকাশিত হওয়ায় জানতে পারে যুব সংসদের সদস্য, খেলোয়ার ও সাবেক নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নির্বাচন ২০২৩ এর নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক ও ক্রীড়া অফিসারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিয়ালকোল যুব সংসদ কর্তৃপক্ষ। একই সাথে জালিয়াতির অভিযোগে সুলতান মাহমুদকে যুব সংসদ থেকে অপসারনসহ তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র (২০১৪ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্র) এর ৭.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্লাব এ্যাফিলিয়েশনের গঠনতন্ত্র নীতিমালা, ঠিকানা, কার্যনির্বাহী পরিষদ, ব্যাংক হিসাব ও কমিটি দেখানো আবশ্যক। কিন্তু এই নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই শিয়ালকোল যুব সংসদের কোন পদে না থেকে ও প্রতিনিধি না হয়েও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার সহায়তায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য পদ লাভ করেন সুলতান মাহমুদ। সদস্য পদ গ্রহনের সময় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেকে শিয়ালকোল যুব সংসদের সাধারন সম্পাদক ও প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করে ধুর্ত এই জালিয়াত। সম্প্রতি জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলে তাতে সুলতান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজনকে অবৈধভাবে ভোটার করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠলে তদন্ত শুরু হয়। এই তদন্ত থেকে নিজের সদস্য পদ রক্ষায় অভিনব এক জালিয়াতির আশ্রয় নেয় সে। চলতি মাসে শিয়ালকোল যুব সংসদের কয়েকজন খেলোয়ার ও সাবেক কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে সাদা ফর্মে স্বাক্ষর নিয়ে গঠন করে মনগড়া কমিটি। কমিটি গঠনের সভা দেখানো হয় ২২ অক্টোবর ২০২২, ঐদিন থেকেই কমিটির মেয়াদ নির্ধারন করা হয় ২২ অক্টোবর ২০২৫ সাল অবধি। এই জালিয়াতির খবরটি প্রকাশিত হলে জালিয়াতি করে গঠিত কমিটির অধিকাংশ নেতৃত্ব, সদস্য ও খেলোয়াড়দের নিয়ে সভা করে সুলতান মাহমুদকে ক্লাব থেকে অপসারন, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন ক্লাবটির নেতৃবৃন্দ। ২০১৪ সাল থেকে অদ্যবধি পালাক্রমে শিয়ালকোল যুব সংসদের আহ্বায়ক, সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা গণমাধ্যম কর্মী ও ক্রীড়া সংগঠক সাজিরুল ইসলাম সঞ্চয় এই সভায় সভাপতিত্বে করেন।
এদিকে গোপনে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহার, ভুয়া রেজুলেশন ও উপস্থিতির স্বাক্ষর জ্বাল করে গ্রহন করা সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ রক্ষার জন্য দৌড়াঝাঁপ শুরু করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রিড়া সংস্থার সদস্য সুলতান মাহমুদ। তবে ক্লাবের বিগত সভাপতি, সম্পাদকেরা বলছেন, সুলতান কিভাবে এই গুরুত্বপূর্ন পদ ব্যবহার করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য পদ পেল তা বলতে পারবো না। অবৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই ওই সদস্য পদ লাভ করেছে।
আরো জানা যায়, চলতি মাসে শিক্ষক শাহাদৎ হোসেনকে আহ্বায়ক দেখিয়ে সভা করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি তৈরী করে স্বাক্ষর নেন সুলতান মাহমুদ। অথচ গত বছরের ২০২২ সালের ২২অক্টোবরে তারিখ দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শাহাদৎ হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে আমার বাড়ীতে সুলতান মাহমুদ আসে এবং বলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাচ্ছে সেটা ঠেকানোর জন্য আপনার স্বাক্ষর প্রয়োজন, এই বলে সুলতান স্বাক্ষর নিয়ে যায়।
কমিটির কার্যকরী সদস্য লিখন সেখ বলেন, আমি এ বিষয় জানি না তবে শুনেছি আমার নাম ও স্বাক্ষর আছে কমিটিতে। কখন বা কোথায় সভা হলো তাইতো জানি না।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তা ও কার্যনির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি লিমন রাজসহ কমিটির অন্তত চারজনের স্বাক্ষরে গড়মিল দেখতে পাওয়া যায়।
অপরদিকে সদস্যপদ ধরে রাখতে সুলতান মাহমুদ শিয়ালকোল যুব সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করে ন্যাশনাল ব্যাংকে একটি এ্যাকাউন্ট খুলেছেন।
এ বিষয়ে সুলতান মাহমুদ বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়।
এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। এ নিয়ে আগামী ২৫ তারিখ শুনানি হবে। শুনানী শেষে প্রকৃত বিষয়াদী সুস্পষ্ট হবে।
Leave a Reply