নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শাহজাদপুরে বিধবার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজেকে এতিম পরিচয়ে পাতানো বোন বানান জাহিদুল। সুযোগ বুঝে একবার বেড়াতেও যান সেই বোনের বাড়িতে। ঘুরে এসে বিধবাকে জানান, গোপনে তার অশ্লীল ছবি তুলেছেন। টাকা না দিলে ছড়িয়ে দেবেন ইন্টারনেটে। এ ভয় দেখিয়ে ওই নারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ১৪ লাখ টাকা।
এমন ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক জাহিদুল শেখকে গ্রেপ্তার করেছে শাহজাদপুর থানা পুলিশ।
প্রতারক জাহিদুল শেখ উপজেলার নুকালি গ্রামের নাজিম শেখের ছেলে। প্রতারণাই তার পেশা বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান।
মো. কামরুজ্জামান বলেন, শাহজাদপুর থানা এলাকার এক মহিলার স্বামী মারা যান ২০১৭ সালে। এরপর তিনি তার ৪ সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন। স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসা দেখাশোনা করেন। এ বছর এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে এক ব্যক্তি নিজেকে পাবনা জেলার শাকিল পরিচয় দিয়ে বিধবার স্বামীর রেখে যাওয়া মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে এতিম বলে পরিচয় দেন এবং বিধবাকে বোন বানান।
এরপর জাহিদুল শেখ কৌশলে ওই মহিলার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। মহিলা তাকে নিজ ভাইয়ের মতো আপ্যায়ন করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এরপর সেই দিনই বিকেলে জাহিদুল চলে যান।
জাহিদুল চলে যাওয়ার ২ থেকে ৩ দিন পর তিনি মহিলাকে ফোন দিয়ে বলেন, গোপনে তার কিছু ছবি তুলেছেন এবং সেই ছবি দিয়ে অশ্লীল ভিডিও বানিয়েছেন। তিনি সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন। ছবি কীভাবে পেল বা কোথা থেকে তুলল তা মহিলা জানতে চাইলে জাহিদুল বলেন, আমি যখন আপনার বাড়িতে ছিলাম তখন আপনি ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন গোসল করতে। তখন আপনার কিছু নগ্ন ছবি তুলেছি।
এরপর জাহিদুল মহিলাকে ভয় দেখিয়ে প্রথমে ১ লাখ টাকা নেন। এরপর অন্য সিমকার্ড দিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন দিয়ে বলেন, তার কাছে মহিলার কিছু গোপন ভিডিও এসেছে। ১ লাখ টাকা না দিলে এই ভিডিও দিয়ে তিনি নিউজ করবেন। এ কথা বলে আরও ১ লাখ টাকা আদায় করেন। এরপরে অন্য আরেকটি সিম কার্ড দিয়ে নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে এ ঘটনায় মামলা না করার ও কাউকে না জানানোর ভয় দেখান। পরে পুলিশ পরিচয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন। এভাবে ৩-৪ মাসে জাহিদুল ওই বিধবার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করে মোট ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
এর মধ্যেই সেই বিধবা নারীর জমানো সব টাকা দেওয়ার পাশাপাশি গহনা বিক্রি করেও তাকে টাকা দেন। এরপর সেই প্রতারক তার কাছে আরও টাকা চায়। নারীর কাছে আর টাকা না থাকায় তিনি টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আবারও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় প্রতারক। নিরুপায় হয়ে ওই বিধবা ৫-৬ দিন আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই মহিলার কাছে আর টাকা না থাকার ফলে তিনি জমি বিক্রি করতে চান। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে বিধবা নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি প্রতারণার বিষয়টি জানান। তখন পুলিশের পরামর্শে বিধবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যা আমলে নিয়ে মামলা রুজু করে শাহজাদপুর থানা পুলিশ।
মো. কামরুজ্জামান আরও বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই প্রতারককে শনাক্ত করা হয়। পরে দেখা যায় তার বাড়ি পাবনা নয়, বরং শাহজাদপুর উপজেলাতেই। এরপর শাহজাদপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম সারওয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম পাঠিয়ে প্রতারককে পোতাজিয়া ইউনিয়নের নুকালি গ্রাম থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ও দুইটি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। তার সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। প্রতারণা করাটাই তার মূল কাজ। তিনি নারী ও পুরুষ উভয় কণ্ঠে কথা বলতে পারেন, এমনকি যে কারও কণ্ঠ নকলও করতে পারেন। তাকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply