নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিভিন্ন সময়ে এডহক, এনক্যাডার, নন ক্যাডার ও প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসা কর্মকর্তাদের অবৈধ পদায়ন আদেশ বাতিল করায় তোপের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম ও অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।
জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট এডহক, এনক্যাডার, নন ক্যাডার ও প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসা কর্মকর্তাদের অবৈধ পদায়ন আদেশ বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে অবৈধভাবে পদায়ন পাওয়া অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. নন্দলাল সূত্রধরের নেতৃত্বে (১২ আগষ্ট ২০২৪) সকালে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস আসেন ৫০-৬০ জন চিকিৎসক। সেইসঙ্গে ডিজি ও এডিজিকে রুমের মধ্যে আটকে রাখেন এবং বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে অবৈধভাবে পদায়ন পাওয়াদের জেরা ও তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্যের প্রভাবশালী মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক। সেইসঙ্গে অধিদপ্তরের ডা. নন্দলাল সূত্রধরের নেতৃত্বে আসা চিকিৎসকরা হট্টগোল শুরু করেন। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম ও অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরকে নিরাপত্তা প্রদান করেন। এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে অধিদপ্তরে অবস্থান নেন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, গত ১১ আগস্ট অবৈধ পদায়ন আদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কেননা, অবৈধ পদায়ন পাওয়াদের রয়েছে প্রভাবশালী চক্র, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে নানা সুযোগ-সুবিধা নেন। যা অন্য সাধারণ চিকিৎসকরা পান না। মাঝে মাঝে তাদের ভয়ে অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তারাও কোনো কিছু বলতে পারেন না।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, ‘অবৈধ এই পদায়ন আদেশ বাতিল করা না ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত। কেননা, পদায়ন পাওয়া বেশিরভাগই অযোগ্য। তারা বিসিএস পরীক্ষায় ফেইল করেছে, তবুও তারা ক্যাডার।’
তারা আরও বলছেন, ‘অবৈধ পদায়ন আদেশ বাতিল করে আবার একদিনের মাথায় উঠিয়ে নেওয়া হলে, এটি হবে দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটি দেশের যেকোনো খাতের জন্য অশনিসংকেত।’
জানতে চাইলে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. উম্মে তানিয়া নাসরিন মেডিভয়েসকে বলেন, ‘দেশের চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘদিনের চাওয়া এবং ছিল বিভিন্ন সময়ে এডহক, এনক্যাডার, নন ক্যাডার ও প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসা কর্মকর্তাদের অবৈধ পদায়ন আদেশ বাতিল করা। অবশেষে এটি গত ১১ আগস্ট অধিদপ্তর বাতিল করে দেয় অধিদপ্তর। অবৈধভাবে পদায়ন পাওয়া চিকিৎসকরা মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালককে জিম্মি করে আদেশ বাতিল করাবে, এটি মেনে নেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ পদায়ন পাওয়া এই চিকিৎসকরা বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকার সুযোগ-সুবিধা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে অবৈধভাবে নিয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের নামে নানা অভিযোগও রয়েছে। তারাই আবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গত ১১ আগস্টের আদেশ বাতিল করা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। এতে স্বাস্থ্যসেবাখাতে অস্থিরতা শুরু হবে। আমরা চাই না, অবৈধভাবে পদায়ন চিকিৎসকরা বহাল থাকুক।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম ও অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরকে ফোন করা হলে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply